মহান আল্লাহ্‌: সমস্ত ধর্মমতের মূল বিষয়

বিশ্বজগতের সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছেন নিরাকার মহান আল্লাহ্‌। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত। তিনি সর্বস্রষ্টা, জগতের একচ্ছত্র অধিপতি ও সর্বশক্তিমান। তিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান, সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। সকল প্রশংসার একমাত্র অধিকারী তিনিই, সমস্ত উত্তম গুন তাঁরই। তাঁর তুলনা একমাত্র তিনিই। তিনি সবচেয়ে বেশী প্রকাশ্য, একইসাথে তিনি সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ। তিনি স্বয়ং মানুষের কাছে ধরা না দিলে মানুষ তাঁকে চিনতে পারে না। এ উদ্দেশ্যে তিনি মানুষের মাঝ থেকে শ্রেষ্ঠ মানবদের বেছে নিয়ে যুগে যুগে তাঁদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই মনোনীত নবী-রসূলের মাধ্যমেই মানুষ তাঁর সন্ধান পেয়েছে।

মানুষের কাছে সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ আল্লাহ্‌ নিজেকে যতটুকু প্রকাশ করতে পারেন এর সবটুকু তিনি প্রকাশ করেছেন মানব-শ্রেষ্ঠ নবীকুল-শিরমনি খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)-এর কাছে। মহানবী (সাঃ)-এর মাধ্যমে প্রেরিত সম্পূর্ণ ও সর্বশেষ শরীয়ত গ্রন্থ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ স্বয়ং নিজের যে পরিচয় দিয়েছেন তাঁর সেই পরিচয়ই হচ্ছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সঠিক। মহান আল্লাহ্‌ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেনঃ

الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ* الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব-জগতের একমাত্র প্রতিপালক-প্রভূ আল্লাহ্‌র। যিনি অযাচিত অসীম দানকারী, পরম দয়াময়। বিচার দিবসের মালিক। (সূরা ফাতেহাঃ ২-৪)

এরপর সূরা বাকারায় আল্লাহ্‌ তা’আলা একপর্যায়ে নিজের সম্বন্ধে বলেছেনঃ

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

“আল্লাহ্‌ তিনি – যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরঞ্জীব-জীবনদাতা, তিনি নিজ সত্তায় স্থায়ী অপরকে স্থিতিদাতা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না। আকাশমন্ডলী ও প্রথিবীতে যা-ই আছে সবই তাঁর। কে সে যে তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে তাঁর কাছে শাফায়াত (সুপারিশ) করতে পারে! এদের সামনে এবং এদের পিছনে যা আছে সবই তিনি জানেন। এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া এরা তাঁর জ্ঞানের কিঞ্চিত পরিমানও আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর রাজত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপৃত। এবং এই উভয়ের রক্ষনাবেক্ষণ তাঁকে মোটেও ক্লান্ত-প্ররিশ্রান্ত করে না। আর তিনি অতি উচ্চ, অতিব মহান।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৬)

কুরআন শরীফের আরেক স্থলে নিজের একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব তিনি নিজেই ঘোষণা করে বলেছেনঃ

بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ أَنَّى يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُن لَّهُ صَاحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ وهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ*

ذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمْ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ*

لاَّ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ*

“আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর তিনিই আদি-স্রষ্টা। যেক্ষেত্রে তাঁর কোন স্ত্রী-ই নাই, সেক্ষেত্রে তাঁর সন্তান হয় কীভাবে? আর তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞাত। এই হলেন তোমাদের প্রতিপালক-প্রভূ আল্লাহ্‌। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই, প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা তিনি। অতএব তোমরা তাঁর উপাসনা কর। এবং তিনি প্রত্যেক বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক। দৃষ্টি তাঁর নাগাল পেতে পারে না কিন্তু তিনি দৃষ্টির মাঝে ধরা দেন। তিনি সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।” (সূরা আনআমঃ ১০২-১০৪)

সমস্ত গুণের আধার মহান আল্লাহ্‌ সূরা হাশরের শেষভাগে নিজ গুণাবলী সম্পর্কে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি বলেনঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ *

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ *

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ *

“তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সকল বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তিনি অযাচিত অসীম দানকারী, পরম দয়াময়। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি সর্বাধিপতি, অতিব পবিত্র, সমস্ত শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস, পূর্ণ নিরাপত্তাদাতা, সর্বোত্তম রক্ষাকর্তা, মহা পরাক্রমশালী, প্রবল-প্রতিবিধায়ক, অতিব গরিয়ান। তারা যা শিরক করে আল্লাহ্‌ তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, আদি সুনিপূন স্রষ্টা, সর্বোত্তম আকৃতিদাতা, সমস্ত সুন্দর নাম একমাত্র তাঁরই। আকাশ এবং পৃথিবীতে যা-ই আছে সবই তাঁর গুণ ও পবিত্রতা ঘোষণা করছে। এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, পরম প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশরঃ ২৩-২৫)

অতএব আল্লাহ্‌ তা’লাকে তাঁরই বর্ণিত পবিত্র গুণাবলী ও এসবের বিকাশের মাধ্যমে চেনা যায়। মানব স্বভাবে যেসব গুণাবলী প্রথিত আছে এগুলো মহান আল্লাহ্‌র গুণাবলীরই কিঞ্চিত প্রতিফলন। এসব গুন যে স্বর্গীয় বা ঐশী গুণাবলীর প্রতিবিম্ব মানবাত্মা একথার সাক্ষ্য দেয় ও গভীরভাবে অনুভব করে।

আদম সন্তানের মধ্যে মহান আল্লাহ্‌ তাঁর ঐশী গুণাবলীর ছিঁটেফোটা দান করেছেন যেন তারা এর মূল উৎসকে চিনতে পারে এবং সেই মহান ঐশী অস্তিত্বের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে।

মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ

আল্লাহ্‌ তা’লা রহমান, পরম দয়ালূ। তাঁর রহমতের ১০০টি ভাগ রয়েছে। এর মাত্র একটি ভাগ তিনি সৃষ্টি জগতে বন্টন করেছেন। আর বাদবাকী ৯৯ ভাগ রহমত তিনি নিজের কাছে রেখেছেন যা দিয়ে পরকালে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে নাজাত দান করবেন। (মুসনদ আহমদ, হাদীস নং-২২৬০৫)

আল্লাহ্‌ তা’লার অসংখ্য গুনবাচক নাম রয়েছে। এক হিসেবে এ গুণবাচক নামের সংখ্যা ৯৯টি। তাঁর মূল নাম হচ্ছে ‘আল্লাহ্‌’ বাকি সব তার গুন-প্রকাশক নাম। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস হলো, আল্লাহ্‌ যেমন অবিনশ্বর ঠিক তেমনি তাঁর সমস্ত গুন অক্ষয়, অমর। তাঁর কোন গুন বা বৈশিষ্ট্য অতীতেও অচল বা রহিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি অত তে যেমন দয়ালু ছিলেন আজও তেমনি দয়ালু এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। ঠিক তেমনি তিনি তার প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্তদের সাথে পূর্বে যেমন কথা বলতেন তেমনি আজও কথা বলেন এবং ভবিষ্যতেও বলবেন। তিনি তাঁর বান্দাদের কাছে এর মাধ্যমে অকাট্যভাবে নিজ অস্তিত্বের প্রমান তুলে ধরেন।

আল্লাহ্‌ তা’লার জীবন্ত অস্তিত্বের একটি জ্বলন্ত প্রমান হলো ‘দোয়ার কবুলিয়াত’। অর্থাৎ, তিনি তাঁর বান্দাদের কাতর হৃদয়ের প্রার্থনা শ্রবণ করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দার সাথে ইতিবাচক এক আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিজেই দোয়ার পথ উম্মুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ

অর্থাৎঃ তোমরা আমাকে ডাকার মত ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (আল-মুমিনঃ ৬১)

দোয়া ও দোয়া কবুলের দর্শনটি হলো ধর্মের প্রাণ বা মূল কথা। এটি আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের অকাট্য প্রমান।

এ যুগে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)-এর পূর্ণ প্রেমিক ও অনুসারী হযরত ইমাম মাহ্‌দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আঃ) আবার জগদ্বাসীর সম্মুখে এ অমূল্য গুপ্তধনের বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে সেই এক-অদ্বিতীয় আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। এক স্থলে তিনি বলেনঃ

“আমাদের খোদা অগণিত আশ্চর্য গুণের অধিকারী কিন্তু কেবল সে ব্যক্তিই তা দর্শন করতে পারে, যে সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যে ব্যক্তি তাঁর অসীম শক্তিতে বিশ্বাসী নয় এবং তাঁর খাঁটি ও বিশ্বস্ত সেবক নয়, তাকে তিনি সেসব আশ্চর্য লীলা প্রদর্শন করেন না। কত হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আজও জানে না, তার এমন এক খোদা আছেন যিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান! আমাদের খোদা-ই আমাদের বেহেশ্‌ত। আমাদের খোদার মাঝেই আমাদের পরম আনন্দ নিহিত। কেননা আমি তাঁকে দর্শণ করেছি এবং সকল প্রকার সৌন্দর্য তাঁর মাঝে প্রত্যক্ষ করেছি। প্রাণের বিনিময়ে হলেও এই সম্পদ লাভ করার যোগ্য। এ মণি ক্রয় করতে যদি সমস্ত শক্তি ও সামর্থ্যও ব্যয় হয়, তবুও তা ক্রয় করা উচিত। হে বঞ্চিত ব্যক্তিরা! এ ঝরনার পানে ছুটে এসো, এটি তোমাদেরকে পরিতৃপ্ত করবে। এ যে সেই জীবন্তসূধা যা তোমাদেরকে সঞ্জীবিত করবে। আমি যে কী করি আর কীভাবে যে তোমাদেরকে এ সুসংবাদ হৃদয়াঙ্গম করাই! মানুষের শ্রুতিগোচর করার জন্য কোন জয়ঢাক পিটিয়ে ‘ইনিই তোমাদের খোদা’ একথা বলে বাজারে-বন্দরে ঘোষণা করি, আর কোন্‌ ঔষধ দিয়ে যে আমি তাদের চিকিৎসা করি যেন একথা শোনার জন্য তারা প্রস্তুত হয়!” (কিশতিয়ে নূহ)

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আঃ) তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ইসলামী নীতি দর্শন’-এর এক স্থলে আল্লাহ্‌র পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেনঃ

“অতঃপর ইহাও জানা আবশ্যক যে, যে খোদার দিকে আমাদিগকে কুরআন শরীফ আহ্বান করে, তাঁহার নিম্নরূপ গুণাবলী লিখিত আছেঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ

الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

رَبِّ الْعَالَمِينَ

الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ

الْحَيُّ الْقَيُّومُ

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ

অর্থাৎ, “সেই খোদা এক-অদ্বিতীয় ও অংশীবিহীন, তিনি ব্যতীত কেহই আরাধ্য ও আনুগত্যের যোগ্য নহে” (৫৯:২৩)। ইহা এই জন্যই বলিয়াছেন যে, তিনি অংশীবিহীন না হইলে সম্ভবতঃ তাঁহার শক্তির উপর শত্রুর শক্তি প্রবল হইতে পারিত। এই অবস্থায় ঐশী মর্যাদা বিপন্ন এবং তিনি যে বলিয়াছেনঃ “তিনি ব্যতীত কেহই আরাধ্য নাই,” ইহার অর্থ, তিনি এমন কামেল খোদা যাহার গুণাবলী ও কামালত এরূপ উচ্চ ও মহান যে, বিশ্ব চরাচরে কামেল গুণাবলীর জন্য কোন খোদার নির্বাচন করিতে চাহিলে, কিংবা মনে মনে শ্রেয়ঃ হইতে শ্রেয়তর এবং উচ্চ হইতে উচ্চতর কোন খোদার গুণাবলী কল্পনা করিতে চাইলে, যাঁহাকে ছাড়াইয়া কেহ উত্তম হইতে পারে না, তিনিই আল্লাহ্‌ বা খোদা হন, যাঁহার আরাধনায় তুচ্ছ বস্তুকে শরীক করা অন্যায়। অতঃপর তিনি বলিয়াছেনঃ “তিনি আলেমুল গায়েব”। অর্থাৎ তাঁহার সত্তাকে একমাত্র তিনিই জানেন। তাঁহার সত্তাকে কেহ পরিবেষ্টন করিতে পারে না। চন্দ্র সূর্য এবং প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তুর আপাদ মস্তক আমরা দর্শন করিতে পারি, কিন্তু খোদার আপাদ মস্তক দর্শনে আমরা অক্ষম। পুনরায় তিনি বলিয়াছেনঃ “তিনি আলেমুশ শাহাদাহ”। অর্থাৎ কোন জিনিষ তাঁহার দৃষ্টির অগোচর নহে। ইহা হইতে পারে না যে, তিনি খোদা বলিয়া অভিহিত হইয়া বস্তু জগৎ সম্বন্ধে উদাসীন। তিনি বিশ্বের অণুপরমাণু পর্যন্ত দেখেন। কিন্তু মানুষ তাহা পারে না। তিনি জানেন, কখন তিনি এই জগৎ-বিধানকে ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন এবং কেয়ামত আনিবেন এবং পুনরুত্থান ঘটাইবেন। তিনি ছাড়া কেহ জানে না যে, এরূপ কখন হইবে। সুতরাং, তিনিই খোদা যিনি সকল প্রকারের সময়কেই জানেন। তিনি আবার বলিয়াছেনঃ “হুওয়ার রহমান”। অর্থাৎ তিনি প্রাণী সকলের অস্তিত্ব ও উহাদের কর্মের পূর্বে শুধু আপন দয়ায়, কোন স্বার্থের জন্য নহে বা কাহারও কর্ম ফলেও নহে, তাহাদের জন্য আরামের সমগ্রী যোগাইয়া থাকেন। যেমন, সূর্য ও পৃথিবী এবং অন্য সব জিনিষ আমাদের অস্তিত্ব লাভের পূর্বে ও আমাদের কার্য সাধনের পূর্বে, আমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। এই দানের নাম খোদা নিজ গ্রন্থে রহমানিয়্যত এবং এই কাজের দিক হইতে নিজের নাম রহমান রাখিয়াছেন। তিনি পুনরায় বলিয়াছেনঃ- “আর্‌ রহীম”। তিনি খোদা, যিনি উত্তম কাজের সর্বোত্তম পুরস্কার দেন। কাহারও শ্রমকে বিনষ্ট করেন না। এই কাজের দিক হইতে তিনি রহীম এবং এই গুণের নাম রহীমিয়্যত। তারপর তিনি বলিয়াছেনঃ “মালেকে ইয়াওমিদ্‌দীন”। অর্থাৎ সেই খোদা প্রত্যেকের পুরস্কার বা শাস্তি স্বহস্তে ধারণ করেন। তাঁহার এমন কার্য নির্বাহক নাই, যাহাকে তিনি আকাশ ও পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা সঁপিয়া দিয়া নিজে পৃথক হইয়া বসিয়া আছেন এবং নিজে কিছুই করেন না। এমনও নহে যে, সেই কার্য নির্বাহকই যত পুরস্কার ও শাস্তি দেয় বা ভবিষ্যতে দিবে। তারপর তিনি বলিয়াছেনঃ

الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ

“আল মালেকুল কুদ্দুস”। অর্থাৎ “সেই খোদা বাদশাহ, যাঁহার কোনই কলঙ্ক নাই” (৫৯:২৪)

ইহা সুস্পষ্ট যে, মানুষের বাদশাহাত কলঙ্কহীন নহে। দৃষ্টান্ত স্থলে, যদি কোন বাদশাহের সব প্রজা কষ্ট পাইয়া বা বিতাড়িত হইয়া দেশ ত্যাগ করিয়া অন্য দেশ অভিমুখে পলায়ণ করে, তবে তাহার বাদশাহী কায়েম থাকিতে পারে না। কিংবা যদি সব প্রজা দুর্ভিক্ষ পীড়িত হয়, তাহা হইলে রাজস্ব কোথা হইতে আসিবে? যদি প্রজাগণ বাদশাহের সহিত তর্ক আরম্ভ করিয়া দেয় যে, তাঁহার ও প্রজাদের মধ্যে এমন কি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পার্থক্য আছে, তাহা হইলে তিনি তাহাদের নিকট নিজের কি বিশেষ যোগ্যতা সাব্যস্ত করিবেন? বস্তুতঃ খোদা তা’লার বাদশাহী এ প্রকারের নহে। তিনি মুহূর্তে সব দেশ লয় করিয়া অন্য সৃষ্টি আনয়ন করিতে পারেন। যদি তিনি এইরূপ ক্ষমতাবান স্রষ্টা ও শক্তিমান প্রতিপালক না হইতেন, তাহা হইলে তাঁহার বাদশাহাত নির্যাতন ছাড়া চলিতে পারিত না। কারণ তিনি একবার বিশ্ববাসীকে ক্ষমা এবং মুক্তি দান করিয়া অন্য জগৎ কোথা হইতে আনিতেন? মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণকে পৃথিবীতে পুনঃ প্রেরণের জন্য আবার ধর পাকড় ও নির্যাতনের পথে কি প্রদত্ত ক্ষমাকে প্রত্যাহার করিতে হইত না? তদবস্থায়, তাঁহার ঐশী-কর্মকান্ডে পার্থক্য ঘটিত এবং তিনি পৃথিবীর বাদশাহ্‌গণের ন্যায় এক কলঙ্ক কালিমা লিপ্ত বাদশাহ হইয়া পড়িতেন, যাহারা দেশের জন্য আইন-কানুন তৈরি করে, যাহারা কথায় কথায় বিগড়াইয়া যায় এবং নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য যখন দেখিতে পায় যে, নির্যাতন ছাড়া গতি নাই, তখন তাহারা নির্যাতনকে মাতৃ-স্তন্যের দুধের ন্যায় মনে করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, রাজকীয় আইনে একটি জাহাজকে বাঁচাইতে একটি নৌকার সকল আরোহীকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করাকে ও সত্য সত্যই বিনষ্ট করাকে, সিদ্ধ রাখা হইয়াছে। কিন্তু খোদার পক্ষে এই প্রকার অসহায় হওয়া অনুচিত। সুতরাং যদি খোদা সর্বশক্তিমান ও অনস্তি-ত্ব হইতে সৃষ্টিকারী না হইতেন, তাহা হইলে তিনি হয় দুর্বল রাজাদের ন্যায় মহিমার পরিবর্তে অত্যাচারের দ্বারা কাজ লইতেন, অথবা বিচারক হইয়া খোদায়ীকেই বিদায় দিতেন। পরন্ত খোদার জাহাজ সকল মহিমার সহিত প্রকৃত বিচারের উপরে চলিতেছে। তিনি আবার বলিয়াছেন, ‘আস্‌সালাম’ অর্থাৎ, সেই খোদা, যিনি ত্রুটি-বিচ্যুতি, বিপদ-আপদ ও কঠোরতা হইতে নিরাপদ, বরং শান্তি দাতা। ইহার অর্থও স্পষ্ট। কারণ যদি তিনি নিজেই বিপদগ্রস্থ হইতেন, লোকের হাতে মারা পড়িতেন এবং তাঁহার ইচ্ছা-শক্তি ব্যর্থ হইত, তাহা হইলে এই মন্দ নমুনাকে দেখিয়া মন কি প্রকারে এই বলিয়া সান্ত্বনা লাভ করিতে পারিত যে, এহেন খোদা আমাদিগকে নিশ্চয় আপদ মুক্ত করিবেন? আল্লাহ্‌ তা’লা মিথ্যা উপাস্যদের সম্বন্ধে বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَاباً وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئاً لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ *

إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَاباً وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئاً لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ *

مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ *

“যে সব মানুষকে তোমরা খোদা বানাইয়া বসিয়া আছ, তাহারা সকলে মিলিয়া একটি মাছি সৃষ্টি করিতে চাহিলেও, কখনও তাহা পারিবে না, এমনকি একে অপরকে সাহায্য করিলেও না। বরং যদি মাছি তাহাদের কোন জিনিষ ছিনাইয়া লইয়া যায়, তবে সেই মাছি হইতে সেই বস্তু ফেরৎ আনিবার শক্তিও তাহাদের হইবে না”। (২২:৭৪-৭৫)

তাহাদের উপাসকগণ বুদ্ধি ও শক্তিতে দুর্বল। খোদা তো তিনি , যিনি সকল শক্তিমান হইতেও অধিক শক্তিশালী এবং সকলের উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী। কেহ তাঁহাকে ধরিতে বা বধ করিতে পারে না। যাহারা ভ্রমে নিপতিত, তাহারা খোদার মর্যাদা বুঝে না এবং জানে না যে, খোদা কেমন হওয়া উচিত। তারপর বলিয়াছেনঃ

“খোদা শান্তি দাতা, স্বীয় কামালাত ও তৌহীদের প্রমাণ প্রতিষ্ঠাকারী”।

ইহা এই কথার প্রতি ইঙ্গিত করিতেছে যে, প্রকৃত খোদার মান্যকারী ব্যক্তি কোন মজলিসে লজ্জিত হইতে পারে না এবং সে খোদার সম্মুখেও লজ্জিত হইবে না। কারণ তাহার কাছে শক্তিশালী যুক্তি থাকে। কিন্তু কৃত্রিম খোদায় বিশ্বাসী বড়ই বিপদে থাকে। সে যুক্তি দেয়ার পরির্বতে নিরর্থক আজেবাজে কথাকে গোপন তত্ত্ব আখ্যা দেয়, যাহাতে হাস্যাস্পদ হইতে না হয় এবং প্রমাণিত ভ্রান্তি সমূহকে ঢাকা দিতে চাহে। তিনি আরও বলিয়াছেনঃ

السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ

অর্থাৎ “তিনি সকলের রক্ষক, পরাক্রমশালী, নষ্ট হওয়া কাজকেও সুসম্পন্নকারী; তাঁহার সত্তা চূড়ান্তভাবে অভাবের অতীত” (৫৯:২৪)

তিনি আরও বলিয়াছেনঃ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى

অর্থাৎ “ তিনি এমন খোদা যে, তিনি সকল দেহেরও স্রষ্টা এবং সকল আত্মারও স্রষ্টা; গর্ভাশয়ে রূপশিল্পী তিনিই। যত ভাল ভাল নাম ধারণা করা সম্ভব, সব তাঁহারই” (৫৯:২৫)

তিনি আরও বলেনঃ

يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থাৎ “আকাশমন্ডলের প্রাণীরাও তাঁহার নাম পবিত্রতার সঙ্গে স্মরণ করে এবং পৃথিবীর প্রাণীরাও করে”।

এই আয়াতে ইঙ্গিত রহিয়াছে যে, মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রে বসতি আছে এবং ঐ সকল প্রাণীও খোদার হেদায়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

পুনরায় বলেনঃ

عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

অর্থাৎঃ “খোদা সর্বশক্তিমান” (২:১৪৯)

এই নাম উপাসকগণের জন্য বড়ই শান্তি প্রদায়ক। কারণ, খোদা যদি দুর্বল হন এবং সর্বশক্তিমান না হন, তবে এরূপ খোদার নিকট আমরা কি আশা করিব?

তারপর বলেনঃ

رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

অর্থাৎঃ তিনিই খোদা যিনি সকল জগতের পালনকর্তা রহমান, রহীম এবং বিচার দিনের স্বয়ং মালিক। এই দিনের কর্তৃত্ব তিনি কাহারো হাতে দেন নাই। (১:২-৪)

أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ

প্রত্যেক আহ্বানকারীর আহ্বান শ্রবণকারী এবং জবাব দানকারী অর্থাৎ প্রার্থনা মঞ্জুরকারী। (২:১৮৭)

আবার বলিয়াছেনঃ

الْحَيُّ الْقَيُّومُ

অর্থাৎ, “সদা বিদ্যমান, সকল প্রাণের প্রাণ এবং সব অস্তিত্বের আশ্রয়” (২:২৫৬)

ইহা বলার কারণ, তিনি অনাদি ও অনন্ত না হইলে তাঁহার জীবন সম্বন্ধে আশঙ্কা রহিত যে, আমাদের পূর্বেই না তাঁহার মৃত্যু হইয়া যায়। তারপর বলেনঃ

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ

অর্থাৎ “সেই খোদা এক-অদ্বিতীয় খোদা। তিনি কাহারও পুত্র নহেন, এবং কেহ তাঁহার পুত্র নহে। কেহ তাঁহার সমকক্ষ নহে এবং কেহ তাঁহার স্বজাতীয় নহে”। (১১২:২-৫)

প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আঃ) তাঁর এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় মহান আল্লাহ্‌র পরিচয় এভাবে তুলে ধরেনঃ

“ইসলাম ধর্মের যাবতীয় বিধি-বিধানের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো, ‘ইসলাম’ শব্দে নিহিত প্রকৃত মর্মার্থ যেন বাস্তবায়িত হয়। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য খোদার ভালবাসা জাগ্রত করতে কুরআনের বিবিধ শিক্ষা সচেষ্ট। কখনো এটি খোদার সৌন্দর্য বর্ণনা করে, আবার কখনো তাঁর অনুগ্রহ স্মরণ করায়। কেননা, অন্তরে কারও ভালবাসা হয় তার সৌন্দর্যের কারণে জন্ম নেয় কিংবা তার অনুগ্রহের দরুণ সৃষ্টি হয়। তদনুযায়ী, খোদাকে নিজ গুণাবলীতে এক এবং অদ্বিতীয় বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর মাঝে কোন খুঁত নেই। তিনি পূর্ণ গুণাবলীর সমষ্টি আর পবিত্র শক্তিসমূহের আধার। তিনি সমস্ত সৃষ্টির ভিত্তি এবং যাবতীয় কল্যাণের উৎস। তিনি সর্বপ্রকার পুরস্কার ও শাস্তি-প্রদানের মালিক এবং যাবতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি দূরত্ব সত্ত্বেও সন্নিকটে বিদ্যমান এবং নৈকট্য সত্ত্বেও তিনি দূরে অবসি’ত। তিনি সবচেয়ে গোপনীয় কিন্তু তাঁর চেয়েও বেশী প্রকাশ্য অন্য কেউ আছে একথা বলা যাবে না। তিনি নিজ সত্তায় জীবিত আর প্রত্যেক সত্তা তাঁর কারণে জীবন্ত। তিনি নিজ সত্তায় অনাদি এবং প্রতিটি জিনিষ তাঁর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। তিনি যাবতীয় জিনিষের বাহক কিন্তু তিনি কারও দ্বারা বহনকৃত নন। এমন কিছুই নেই যা তাঁকে ছাড়াই নিজে নিজে সৃষ্ট কিংবা তাঁর সাহায্য ছাড়া নিজেই বেঁচে থাকতে পারে। তিনি প্রত্যেকটি বস্তুর পরিবেষ্টনকারী কিন্তু এই বেষ্টনী বোঝানো দুস্কর। তিনি আকাশ এবং পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর জ্যোতি এবং প্রত্যেকটি জ্যোতি তাঁর দ্বারা আলোকিত এবং তাঁরই সত্তার প্রতিবিম্ব। তিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক। এমন কোন আত্মা নেই যা তাঁর দ্বারা পালিত না হয়ে নিজ সত্তায় বর্তমান। আত্মার যাবতীয় ক্ষমতা নিজ থেকে সৃষ্ট নয় বরং তাঁরই প্রদত্ত।” (ইসলাম ও এদেশের অন্যান্য ধর্মমত)

এই সুমহান বিশাল অস্তিত্বই আমাদের সবার আশ্রয়। আমাদের উৎস তিনি, আমাদের জীবন, আমাদের চৈতন্য, আমাদের যাবতীয় ইন্দ্রীয় ও শক্তি সব তাঁরই দান। এগুলোকে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজে লাগানোর যথাসাধ্য চেষ্টার নাম ইবাদত বা উপাসনা। সবশেষে আমাদের সবার প্রত্যাবর্তণ তাঁরই কাছে। তিনিই আমাদের হিসেব নিকেশ ও বিচার করবেন। আমরা তাঁর কাছে দয়া, ক্ষমা ও মার্জনা প্রত্যাশা করি।